স্নিগ্ধদীপ্তা মজুমদার
'দেরি করে এসেছে 'যে বর্ষা , 'ইচ্ছে করে ভালোবাসি তাকে ' । গাঢ় মেঘে ঢেকে আসে আষাঢ়ে দিন বা শ্রাবণ সন্ধ্যা। ঝিপঝিপ থেকে ঝমঝম। রাত পেরিয়ে ভোর হয়। তবু বর্ষার মেঘের বিরাম নেই। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। নদীর ঢেউয়ে আছড়ে পড়ে কখনো বা মেঘের ছায়া পড়ে এসে মনে। আঁধার দিনে একলা বসে গাইতে থাকে কেউ 'ছায়া ঘনাইছে বনে বনে / গগনে গগনে ডাকে দেয়া । / কবে নব ঘন বরিষণে গোপনে গোপনে এলো কেয়া '
মনভার করা বর্ষা দিন শেষে যে সুর 'একলা' ঘরে চুপিচুপি আসে তার চোখের জলে সাড়া দিয়ে সেই তো ' নিশীথ রাতের বাদল ধারা ' । সারাদিনের ছায়া অবশেষে বৃষ্টি হয়ে স্মৃতি জাগায়। আমরা ফিরে যাই কত কত ফেলে আসা দিনের ' গোপন স্বপনের ' কাছে। যে 'স্বপন' মনে করায় সারা জীবনের বৃষ্টির কথা। যে বৃষ্টির হদিশ পেতেই তো কত রাত ছুটেছি আমরা।
" বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস / এখানে মেঘ গাভীর মতো চড়ে / পরাণমুখ সবুজনালী ঘাস দুয়ার চেপে ধরে "
কোন ঘাসের সাধ্য আছে দুয়ার চেপে ধরার ? সমস্ত বাধা অতিক্রম করে একদিন তো সেই আষাঢ় ছেয়ে আসে। কড়া নেড়ে ডাক দিয়ে বলে যায় : " যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে সে কথা আজিই যেন বলা যায় " .......
.
.
.
.
.
.
কিন্তু সব কথা বলা হয়ে ওঠে না। ঝড়ের মেঘের ভিতর , ' দুই আঁখি ওই সুরে যায় হারিয়ে সজল ধারায় / ওই ছায়াময় দূরে '.....
আর তাই কবির কথায় , ' হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব / আঁধারে মিশে গেছে বাকি সব' ।
অনুভবের খেলা শেষ হবার নয়। শেষ হয়ও না... ' যারা বৃষ্টি ভিজেছিল ' তারা মেঘ সরিয়ে খুঁজতে থাকে অন্য ছবি। যে ছবি তে ধূসর রঙে আঁকা।' ভাঙাচোরা কলোনিতে' মেঘ ঢুকে আসে। সেই বৃষ্টির ফোঁটায় চোখ ছাড় পায় কেবল। চশমা যায় ভিজে। শহর পারে না ভিজতে। সেই মেঘ তো দূর মফস্বলেই আটকে থাকে।
" তবু ও শহর ভিজতে পারছে কই / মেঘ থমকেছে দূরের মফস্বলে/ মনখারাপের চুক্তিতে হোক সই/ আমার বাড়িতে সুমনের গান চলে " ....
সে চুক্তির কাগজ ভিজে যায় রোজ রোজ । একসময় শরতের মৃদু আলো এসে বলে , " আমার এমন কাছে ---- আশ্বিনের এক বড়ো অকূল আকাশে / আর তাকে পাবো এই সহজ গভীর অনায়াসে ---- / বলতেই নিখিলের অন্ধকার দরকার পাখি গেল উড়ে / প্রকৃতিস্থ প্রকৃতির মতো শব্দে --- প্রেম অপ্রেম থেকে দূরে " ..... ।
Comments
Post a Comment