শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী


বৃষ্টির কলকাতা! আহা! ভেজা রেডরোড, ভেজা ভেজা হাঁ-করা লাল ইঁটের পুরোনো বাড়িগুলো, তারই মাঝখান দিয়ে বর্ষার জল পেয়ে ফনফন করে ওঠা কদমগাছের ডালে ন্যাড়ামাথা বুড়ির মতো ফুলেদের দল আর পাড়া মাতানো তার গন্ধকলকাতার প্রতি এতো যে দূর্বলতা, যার টানে বারবার ফিরে আসা এই একদিক ভাঙাচোরা, একদিক ঝলমলে শহরে তার মধ্যে একটা হল বৃষ্টির পর সদ্যস্নাত কল্লোলিনীর এই বড়ো মোহক, গতি-ছন্দময় রূপএখন আষাঢ় মাস, বর্ষা এসে জমিয়ে বসেছে মেহফিলেরাজেন্দ্রানীর মতো তার একঢাল মেঘালী চুলে মাঝেমধ্যে ঝিকিয়ে উঠছে সূর্যের আলো, আবার লুকিয়ে পড়ছে অখ্যাত প্রেমিকের মতনতারইমধ্যে ইতিউতি মুখ বাড়াতো রথের মেলার দোকানপাট, আমার ছোটবেলাকার দিনগুলিতে সেসব ছিল আনন্দবাজারআমার মেজপিসির শ্বশুরবাড়ি চেতলায়, তার খুব কাছেই বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে রাসবিহারীর মোড় পর্যন্ত বসত বিশাল রথের মেলাসেখানে কাগজের টিয়া থেকে শুরু করে, হরেকরকমের বাঁশি, সলতে লাগানো টিনের ভটভটি, মাটির খেলনা, মুখোশ, কাপড়ের পুতুল আরো কত কি- না পাওয়া যেতএকটা দিন সময় বের করে বাবা আমাকে আর তুয়া দিকে ঠিক নিয়ে যেত মেলায়সেইদিনগুলোয় আমার মনে হত তুয়াদি যেন স্বর্গরাজ্যে বাস করে, পা বাড়ালেই মেলা, কত রকমের খেলনা, আর তেলেভাজা-জিলিপি-সিঙাড়া-বুড়ির চুল! রথের আগের দিন রথ সাজানোটাও ছিল আরেক পর্ব! নানারঙের লাল-নীল-হলুদ-সবুজ কাগজ ভাঁজ করে কেটে কেটে নক্সা বানাতে শিখিয়েছিল বাবা, আর ভাঁজ খুললেই কখনও সেটা হয়ে যেত বড় একটা নক্সা, কখনও একটা নক্সাকাটা পাখি, কখনও ফুলসেইসব দিয়ে রথ সাজিয়ে, জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা কে নিয়ে বিকেলবেলায় রথ টানতে রাস্তায় বেরনোআমার ওই ছোট্ট মাথায় ওদের দেবত্বের জায়গায় পুতুল সত্ত্বাই বেশী করে জায়গা করে নিয়েছিলআগেরদিন হয়তো রাত্রে তুমূল ঝড়-জল হয়ে গেছে, ফিরতিপথে তাই টুক করে চুপিচুপি দেখে নেওয়া পাশের বাড়ির আমগাছ থেকে আম ঝরে পড়েছে কিনা! পেলে তো কথাই নেই, মহানন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি ফেরাআর সাতদিন পরে উলটো রথ টেনে আবার একবছরের অপেক্ষার শুরুঅন্যদিকে আমার স্কুল যাদবপুর বিদ্যাপীঠে একটা সুন্দর সাংষ্কৃতিক পরিবেশ ছিল, আর গান গাইতাম বলে টিচাররা ভালোওবাসতেন খুবগরমের ছুটি শেষ হলে স্কুল খুলেই শুরু হত রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর রিহার্সালের দিনগুলিজুন মাসের শেষের দিকে বা জুলাইয়ের শুরুতে অনুষ্ঠান হত বলে রবিঠাকুরের বর্ষার গান আর কাজী নজরুলের মল্লার আশ্রিত গানগুলি বেশী করে গাওয়া হতবলাই বাহুল্য অধিকাংশ রাগাশ্রয়ী গান আমাকে গাইতে হতআর সেইসব গানের মধ্যে, রিহার্সালের গুঞ্জনের মধ্যে আমার কিশোরীমন কোথায় যেন হারিয়ে যেতসবমিলিয়ে বর্ষার সময়টা ছিল একটা অন্যরকম আনন্দের
বর্ষার যে আবহের কথা চলছিল এতক্ষণ, এবারে তার ভিতরে ঢুকে পড়া যাকআমরাও নাহয় বৃষ্টির ভিতরে হেঁটে শ্রাবণের কিছুটা ভেঙে দেখি! বর্ষা কি? বর্ষা কে? বর্ষা কখন? কার? নাহ! ডেফিনিশনাল কচকচিতে ঢুকবো না একদমই, বরং বলব ভিতরের কথাইলশেগুড়ির মেলানকণিকা বিস্তার থেকে ধারাবৃষ্টির ধুন্ধুমার দ্রুতলয় তেহাই পর্যন্ত যে ঋতুর সাম্রাজ্যবিস্তার, তাকে আমরা বর্ষা বলে ডাকিপাশের বাড়ির ছটফটে কিশোরীর মতন, যে যাওয়া আসায় বুঝিয়ে দেয় তার উচ্ছ্বলতার কত রঙ, রূপ, গন্ধ, স্পর্শঅনেক ডাকনাম যার, অথচ সাড়া দেয় সেই এক সিক্ত মিঠে স্বরইংরাজিতে যাকে বলে মনসুন, ফ্রেঞ্চ- ম্যুসঁ আর হিন্দিতে বরখা, ভাষা পাল্টালেও যার আসা আর ফিরে যাওয়ার সুর একইভাবে বাজেচোত-বোশেখের তীব্র গ্রীষ্মের দাপাদাপির পর কালবৈশাখির হাত ধরে, মৌসুমী হাওয়ায় ভর করে যে নেমে আসে প্রথম প্রেমের মত, রসসিক্ত করে দিতে রাঙামাটি থেকে কালো পিচ ঢালাই রাস্তা, খড়ের চাল থেকে কংক্রিট বসতবাক্স পর্যন্ত সমস্ত অস্নাত কে স্নাত করে তুলতেআর বর্ষার কথা এলেই আমার মন-মস্তিষ্কে মল্লারের গন্ধ ছড়াতে থাকেমল্লারের সুর তার সমস্ত অদাকারি নিয়ে আচ্ছন্ন করে ফেলতে থাকে মননের উঠোন, ঘর-বারমেঘ, রামদাসী, সুরদাসী, ধুলিয়া, গৌড়, নট, মিয়াঁ কি মল্লার... বন্ধুর মতন হাত বাড়িয়ে ডাকতে থাকে আরও আরও গভীর বৃষ্টিতে নিয়ে যাবে বলেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টির সোঁদা রঙে ভিজতে থাকে দিনযাপনের ক্যানভাসগুলিঅজান্তেই লেখা আসে, গান হয়ে ওঠে আর আরেকটু বেঁচে নিতে শেখায়। 
মনে আছে বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা একবার সিকিম থেকে একটি ওয়ার্কশপ সেরে ফেরার পথে দুদিনের জন্য দার্জিলিং- থেমেছিতার ঠিক একদিন পরেই বর্ষা এসে যাবে শুনে ট্যুরিস্টরা সব ফেরবার পথ ধরেছে, সেই ফাঁকে বাঙালী চিরন্তনী দার্জিলিং একটু নির্জন হয়ে এসেছে তখনবিকেল হয়ে আসছে সেসময়, মায়া লজের বারান্দা থেকে সোজা দেখা যাচ্ছে সিংগালিলা রেঞ্জপাহাড় আর আমার মধ্যে শুধু ভেসে বেড়াচ্ছে হাল্কা কিছু ডানাওয়ালা মেঘশাবকওদের কথা ভেবেই যেন বাবার লেখা কবিতার দুটো লাইন আউড়ে উঠলাম মনে মনে

মেঘেরা চলেই যাচ্ছিল,
আমিই ওদের আটকালাম ঝুলবারান্দার কোণে
তোমাকে বোঝাতে হবে ভেবে
জল কতরকম –‘
মনে হল, ইশ আমার কোনো বাহানা নেই কেন, এই মুহূর্তে কবিতা লেখবার? হঠাৎ চারটে লাইন কিলবিলিয়ে উঠল মাথার ভেতর
বাহানা দাও, বাহানা দাও
মেঘশাবক... মেঘশাবক...
আজানুতল ভাষা সাজাও
অহনাসুখ ব্যাথাসজল –’
সত্যি কথা বলতে গেলে শিল্পের বাহানা তো উপলব্ধী, শিল্পের বাহানা আবার কখনও শিল্প নিজেইজীবন থেকেই উঠে আসে আবার জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়আর যেখানে কবিতা আর সঙ্গীত এক হয়ে গান হয়ে ওঠে, সে এক অন্য দিগন্তকথার উদ্দেশ্যের সাথে যেখানে সুরের উদ্দেশ্য মিলেমিশে যায়, সেখানেই সার্থক গানের সৃষ্টি। 

আসলে সঙ্গীতের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক তো সন্তানের সঙ্গে মায়ের মতননাড়ীর টানে বাঁধাপ্রকৃতির মধ্যে যার শুরু আর প্রকৃতির মধ্যেই ছড়িয়ে থাকে যেউত্তর ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের আবহে আমার জন্ম, কত রাত্রি যে রাগ সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে ভোর হয়ে গেছে তার কোনো হিসাব নেই, কিন্তু খুব ছোট্ট বয়েসেই এটা বুঝতে শিখে গেছিলাম অজান্তেই, সঙ্গীতই একমাত্র ভাষা যা সমস্ত রকমের সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে আরও উদারতার মধ্যে নিয়ে যেতে পারেমনে আছে প্রথম যে মল্লারের তালিম পেয়েছিলাম তার নাম গৌড়মল্লার, তখন আমার কিশোরী-বয়সবন্দিশটি ছিল

                    “মান না করে রি গোরী
                      তোরে কারণ আয়ো মেহা
ট্র্যাডিশনাল বন্দিশ, দাদু (সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী) পেয়েছিলেন তাঁর গুরু সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছ থেকে, আর বাবা (পন্ডিত মানস চক্রবর্তী) দাদুর কাছে –  তখন হয়ত বাবারও আমার মতনই ছেলেবেলার দিন ছিলখাম্বাজ ঠাটের এই অদ্ভুত সুন্দর চলনের রাগটির আরোহণ-অবরোহণ, বাদী-সমবাদী, পকড় শেখাতে শেখাতে একসময় বন্দিশের কথার সাথে রাগরূপের সম্পর্কের জায়গাটায় এসে পৌঁছলেন বাবাযেখানে একটি মেয়ের মান ভাঙানোর কথা বলা হচ্ছেযার মধ্যেই ওতপ্রোত হয়ে আসছে গৌড়মল্লারযে মেঘ ছেয়ে আসছে সে ওই মানিনীর অভিমানের গাঢ়তা নিয়েই ছেয়ে আসছে যেন... তাই তো তার জন্যেই যেন মেঘ সেজেছে, বলছে – ‘তোরে কারণ আয়ো মেহা’ –  অর্থাৎ তার জন্যেই এই অকালশ্রাবণমনে আছে একদিনের কথা, তখন নব্বইয়ের শেষের দিকসেদিন রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান, বর্ষাকাল হলেও সারাদিন রোদঝলমলেই ছিল, বাবা কোনও দিন আগে থেকে রাগ ঠিক করে আসরে বসতেন না, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আসরে গিয়ে স্বরমন্ডল বাঁধা দেখে আমরা বুঝে নিতাম কি রাগ হবেবাবা সেদিন রাগ নিলেন মেঘমেঘমল্লার যাকে বলেআশ্চর্যভাবে সন্ধের পর মুষলধারায় নামল বৃষ্টি! টানা তিনঘন্টার বৃষ্টিতে কলকাতার রাস্তায় জল, য়ার আমরা এই অদ্ভুত সমাপতনে অভিভূত, মল্লারে মেতে আছিঅর্থাৎ আমি যদি বৃষ্টিভাবে ভাবাপন্ন হই, তাহলে সেও আমাকে ভিজিয়ে তুলতে পারে, ভেজা হাওয়ায়, সোঁদা রঙে আমার বাইরে ভেতরে মল্লার নামতে পারে মুষলধারায়এত গূঢ় অথচ এত সহজ দর্শনের কথা বলে যে সঙ্গীত, তাকে হয়ত ওই রাঙামাটির পথ ধরে হেঁটে যাওয়া রাখাল অনুভব করতে পারে কিন্তু তথাকথিত তাত্ত্বিকেরা পারেন নাকারণ তারা হিসেবের কচকচানিতে সঙ্গীতের মূল চেতনার পথটা হারিয়ে ফেলেনখ্যাপার পরশ পাথর খুঁজে মরার মতন করে তারাও শুধু পাথরই হাতড়ে চলেন, আর যে সেই লোভকে অতিক্রম করে সহজ হয়ে চারিপাশে তাকায়, কান পেতে শোনে সে ওই মাঝদুপুরে কুলপিওয়ালার ডাকের মধ্যেও ষড়জ কে খুঁজে পায়যে সঙ্গীত মাঠ-ঘাট-গলি-ঘুঁজি-রাস্তা-জনজীবনের মরমের কথা বলে, যাপনের সহজিয়া রূপটাকে তুলে ধরে তার মধ্যে এতো জটিলতার তকমা এঁটে শুধুমাত্র কিছু মানুষের জন্য কুক্ষিগত করে রাখার বিরোধী ছিলেন যেমন আমার পূর্বসূরীরা তেমন আমিওএকজন দৃষ্টিহীন মানুষ যেমন তার স্পর্শের মাধ্যমে চিনে ফেলতে পারেন তার প্রিয় ব্যবহার্যগুলিকে, তেমনই তথাকথিত ব্যাকরণ না জেনেও শুধুমাত্র মননশীলতার ছোঁয়াচ দিয়ে আমরা চিনে নিতে পারি আমাদের স্থান-কাল-পাত্রের দার্শনিকতায় জেগে ওঠা রাগটিকেযে সময়ে যে ভাব আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে তার সম্পূরক বা তারই সমভাবাপন্ন সুর আমাদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় এক বন্ধুকে, যে শুধু পাশে এসে দাঁড়াতে জানে, হাতে হাত রাখতে জানেপ্রতিদানে কিচ্ছুটি চায় না

 

লালা দেও লাল কৃত মিয়াঁ তানসেনের ছবি
জনশ্রুতি বলে, মল্লার সৃষ্টি করেছিলেন মিয়াঁ তানসেন, সেজন্যই তার নামানুসারে রাগটির নাম হয়ে যায় মিয়াঁ কি মল্লারসেই মিয়াঁ তানসেনই আবার মিয়াঁ কি মল্লার সারঙ্গ এর সংমিশ্রণে তৈরী করলেন রাগ মিয়াঁ কি সারঙ্গসারঙ্গ যেখানে বলে গ্রীষ্মের শুষ্ক দাবদাহের কথা, সেখানেই মল্লার বৃষ্টির বার্তা নিয়ে আসেঅর্থাৎ জল আর আগুন পাশাপাশি বসত করে যেখানে, যাকে আমরা আর্বান ল্যাংগুয়েজে ফায়ার অ্যান্ড আইস এফেক্ট বলিপ্রথম বৃষ্টির উষ্ণতায়, প্রথম ভিজে ওঠার সুরহয়তো কোনও এক গ্রীষ্মের পড়ন্ত দুপুরের দরীচায় দাঁড়িয়ে আকাশের নৈঋত কোণে একটুকরো কালো মেঘ মিয়াঁ তানসেনের মনের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে যেতে এই রাগের সুর হয়ে বেজে উঠেছিল! কে বলতে পারে, আজকের বাজারের কোনো এক ব্যাপারীও হয়ত দিনের শেষে আকাশের কোণায় একটুকরো কালো মেঘ দেখেও অজান্তে একই সুর গুনগুনিয়ে ওঠে! আসলে ভালোবাসার মতই স্বচ্ছ আর তরল সেই সঙ্গীত যে সঙ্গীত প্রকৃতির প্রতিটি ইঁট-কাঠ-পাথর থেকে জন্ম নেয় আর বেমালুম সেঁধিয়ে যায় আমাদের ভিতরে আর তাকে ধারণ করে আমাদের বাস্তবসে সেই আকারেই বিরাজ করে যে আধারে তাকে আমরা নিতে পারিমিয়াঁ কি মল্লারের কথা হল, এখানে বলে রাখা ভালো, শুধু মল্লার বলতে কিন্তু মূলতঃ মিয়াঁ কি মল্লারকেই বোঝায়, যদিও বিষয়ে দ্বিমত আছে যে তানসেন-পূর্ব সময়ে মল্লারের অস্তিত্ব ছিল, তানসেন নিজের মতো করে মল্লার কে যে রূপ দিয়েছেন তাকেই মিয়াঁ কি মল্লার বলেতা সে যাই হোক না কেন, আমাদের ভাঁড়ার তাতে পূর্ণই হয়েছেএছাড়াও আরো অনেকে মিয়াঁ কি মল্লারের সঙ্গে সংমিশ্রণে রাগসৃষ্টি করেছেন, যেগুলি তাদের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বা রাগমিশ্রণের ধারণা অনুযায়ী মল্লার আখ্যা পেয়েছে, যেমনসুরদাসী মল্লার, রামদাসী মল্লার, চর্জ্জু কি মল্লার, নটমল্লার, সুরমল্লার, মেঘমল্লার, ধুলিয়া মল্লার ইত্যাদিএকেক মল্লারের একেক রঙ, সঙ্গীতের মেঘে রামধনুর মতন পাশাপাশি রয়ে গেছে, অপেক্ষা শুধু চিনে নেওয়ার
বৃষ্টি তো শুধু বাইরের নয়, বৃষ্টি তো ভেতরেরওসুর তো শুধু মূর্ছনার নয়, সংগ্রামেরওআমাদের ভেতরে আকাশ প্রতিনিয়ত রঙ বদলায় উত্থানে, পতনে, উঠে দাঁড়ানোয়, ভেঙে পড়ায়... সুর জাগে, সুর নিভে যায়তাই বাইরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন না থাকলেও মন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে থাকে কখনও কখনওভেতরের বৃষ্টিতে মল্লারের পথঘাট ধুয়ে যায়মনে হয় সেই শ্রাবণ হয়ত চিরকালেরপ্রিয় কবির কবিতার লাইন মনে পড়ে

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে
অবনী বাড়ি আছো?’’
সেখানে তো সেই নিজেকেই ডেকে ডেকে ফেরা, ভিতরের দারুণ বৃষ্টির মধ্যে, ভেসে যাওয়ার অসম্ভবের মধ্যে খুঁজে মরা নিজেরই বন্ধুতার হাত... যেখানে সেই ছটফটে মেঘলা কিশোরী চুপ করে বসে পড়ে ফ্রকে মুখ গুঁজে আর বর্ষার উচ্ছলতা ভাসিয়ে নিয়ে যায় কারো ঘর, কারো রুজিরুটি, কারো শান্তিজল

Comments

পাঠকের পছন্দ