ধনঞ্জয় ঘোষাল

গুচ্ছ কবিতা




কেউ একা নয়



ফিরতে হবে, ফিরেও যাব, কয়েকটি দিন সহ্য করো,
হবে হবে,  সবই হবে, আগের মতো জড়িয়ে ধরো।
ফিরতে হবে জলের কাছে, ট্রামের কাছে, অফিসপাড়ায় 
মেঘ দাঁড়াবে আবার ঠিকই তোমার ঠোঁটের ব্যস্ততায়। 
মনে পড়ে কয়েকটি মুখ, পেরিয়ে যাবার গল্প নামে,
ফেরার নামে হয়তো কেউ দূরে কোথাও মিলিয়ে যাবে।
তাকিয়ে দেখি তার দিকে আজ যে ছেড়ে যায় ইচ্ছাকৃত, 
এই তো সময় নিজের কাছে উদ্ধৃতি আর সংশোধিত। 
হবে হবে,  সবই হবে, স্বপ্ন যেমন সারায় ক্ষত,
ফিরতে গিয়েও কয়েকজনে আজান দেবে আগের মতো। 
এই অবেলায় আমরা কজন বাঁচার জন্য মুখিয়ে থাকি,
রাণওয়েতে ছুটবে জীবন টেক-অফ নিতে একটু বাকী। 
ডাকতে হবে,  ডেকেও নেব, দূরে  যারা সরিয়ে নিল,
এই তো সময়  ভাবতে পারি,  যায়নি কেউ কাছেই ছিল।

ফিরতে হবে,  ফেরাও তবে, দাঁড়িয়ে আছে যে যার মতো, 
এই অবেলায় কেউ একা নয়,  জড়িয়ে আছি ওতপ্রোত।




ডাকো, ডেকে নাও...



যে যাকে ছেড়ে দিয়ে গেছ,
আজ তার মনের কাছে গিয়ে দাঁড়াও,
হাত বাড়াও, অভিমান খর্ব করে নিজেকে বড় করে বলো -
তোমাকে ডাকছি, এসো...
ডেকে নেবার এই তো সময়-
তুমিও তো জানো না কতোদিন আছ আর,
সেও বা থাকবে কিনা এই ধূসর  অপেক্ষার শেষে-
এই তো সময়, পুরনো ভুল গুলো শুধরে নেবার,
এই তো সময় স্বীকারোক্তি আর সম্ভাষণ দিয়ে নিজেকে সাজানোর,
মনটাকে স্যানিটাইজ করার এই তো সময়, 
এই তো সময় পাশের মানুষের দিকে মুখ তুলে তাকাবার। 
কী এমন তালেবর হে তুমি
মহাকালের দুর্যোগ উপেক্ষা করে
ধরে রাখতে পারবে আস্ফালন অথবা অহংকার...
নত হও, এটাই তো নত হবার সময়, 
এটাই তো আত্মশুদ্ধি,
পুরনো খাম খুলে দেখে নেওয়া চিঠি, ছোটোবেলার রক,
আড্ডা, ছিটকে যাওয়া প্রেম ও পরকীয়া -
এই তো সময়, দূর থেকে দল বেঁধে থাকা, 
কথা দিয়ে প্রাচীর না তুলে বানাও সেতু-
বানাও সম্পর্কের সড়ক অথবা ব্রাউন কোনো ভালবাসার হোম-স্টে, এবং ইয়ালো বর্ডার...

এই তো সময় 
 ঈষত ক্ষুণ্ণ হওয়া মনোমালিন্য মুছে
তাদেরই ডাকো, যে তোমার নীচে ছিল,
এখন আর ওপর বলে কিছু নেই,
সমস্ত ওপরে ওঠার ভরসা প্যারাস্যুট চাইছে, 
ছেড়ে যাওয়া সম্পর্ক সেই এক একটা প্যারাস্যুট,
আমি নীচে নেমে মার্জনা চেয়ে
আরেকবার শুরু করতে চাই জিরো থেকে... 

কে আর দেখবে তোমায়
যদি পৃথিবীটা হয়ে যায় মৃত ও বোবার,
মহামারী মুছে দেয় ভেদরেখা-
তফাত অর্থহীন সমুদ্র ও ডোবার।




সে এক ফড়িং জীবন 



কিছু কিছু মন লগ-অফ করলো স্মৃতি,
কিছুটা ধৈর্য  আটকে দিতেও পারতো।
অভিমান সেই বেহালাবাদক হয়ে
ব্রেক-আপ করেও গান হয়ে যদি থাকতো। 

আমিও তো সেই মেঘের এয়ারপোর্টে 
তোমার জন্যে এনেছি মোমের দিন,
আলগা কোনো বিষণ্ণতার মানে
নিঙিয়ে যাওয়া আস্ত মুড়ির টিন।

তবু কিছু গান গেয়েছে মাটির     টিলা
গাছে গাছে থাকে  ফড়িং-এর  হাইফেন,
বিস্ময় থেকে খুলে নেওয়া কিছু চিঠি 
জীবন আসলে গলানো স্মৃতি র চেন । 

এই তো কেমন বুদবুদ এল ফিরে
যে যার মতো ফিরছে অটোয় চড়ে,
সাইকেল থেকে স্যাক্সোফোনেও আজ
পিছুটান তবু পায়রা হয়েই ওড়ে।

তোমার ঠোঁটেতে হিল-স্টেশনের দুপুর 
আইডি চাইলো প্রোটোকল ভেঙে কারা,
গ্রামোফোন বাজে তিরিশ বছর পিছিয়ে 
কী করে বাঁচবো তোমার জানলা ছাড়া?

অবেলার মেঘে তোমার তুর্কি হাওয়া 
বয়স এগিয়ে ডাউনমেমোরি লেন,
তোমাকে দেখার ইচ্ছে একাই ভিজছে
তুমি শুধু বলো সাবধানে থাকবেন। 

তোমায় নিয়ে উড়ছি উড়বো বলেই
তুচ্ছ করেছি সব কিছু চাওয়া  পাওয়া, 
এই সব দিন কেটে গেলে দেখো ঠিক
আবার দুজনে বোলপুরে ফিরে যাওয়া। 

আস্ত প্রেমের পাথর গড়িয়ে পড়ছে
আর কিছু নেই প্রয়োজন ও চাহিদা,
ভালবাসা পেয়ে গড়িয়ে যাওয়াই ধর্ম
এই তো জীবন দেখে যান কালীদা।




তুমি, শুধু তোমাকেই
 

ওই দূর আকাশের দিকে চাও,
এই নিথর দিঘির কাছে পড়ে আছে পুরোনো স্মৃতির সরোদ,
হলুদ মাঠে  মোমরং টেনে দাও তুমি, এক টানে লিখে রাখো চিঠি,
এই যে বল্লভপুর অরণ্যে আমি পুরোনো গাছের মতো দেখতে চাই ধ্বংস পেরিয়ে তোমাকে,
এই যে ভোরের আজান থেকে তোমাকে ডেকে নিয়ে গেছি বালিয়াড়ির দিকে,
এই যে ছাতিমতলায় লাল বেদীতে তোমার বসে থাকার অপেক্ষা নিয়ে মোহন সিং গান ধরেছেন,
এই যে সমস্ত সোনাঝুরি শক্তির পদ্য মুখে নিয়ে নাট্যগ্রাম হয়ে গেল, 
সে কি ধ্বংসকে তুড়ি মেরে
 দেখিয়ে দেওয়া নয়?
সে কি দেখিয়ে দেওয়া নয় যে আমরা আজও নতুন বর্ডার টপকে যাব বলে
নির্বাসনেও ট্রামলাইন একেছি অবহেলায়?
সে কি দেখিয়ে দেওয়া নয় যে,
আজও আলেয়ার কাছে আলো
অলীক লন্ঠনের দ্যোতনায় দেখে নেয়
না-দেখা পথের ক্ষতচিহ্ন?
সে কি দেখিয়ে দেওয়া নয় যে,
আমরা আয়ু ভিক্ষা না চেয়ে আলোকে উপহার দিয়েছি টানারিকশার গলি?

চলো, আজ  সমস্ত লেখা ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে, 
আমার অলিখিত চিঠির মুখবন্ধ হয়ে পড়ে আছে কদমতলার ডাকঘর,
চলো, আজ সমস্ত অরণ্যের
নির্জন কাঠুরিয়া গাছের কাছেই চেয়ে নিচ্ছে আত্মসমর্পণ। 
আজ শুধু তুমি সুধা হয়ে এসো,
আমি অমলের মতো এই মহামারিতেও জানলা হয়ে আছি নতুন করে আকাশ দেখবে বলে...




এমন করে বলতে পারি


তুমি বলবে,
এরপর?  কতখানি?  কতটুকু  বাকী আর?
আমি বলবো-
Where the mind is without  fear

তুমি বলবে,  এখনো আলো?  হারালো যে সবটাই,
আমি বলবো-
How many times can a man look up before he sees the sky?

তুমি বলবে, এখনও আশা? এখনো গাছ? ফুল ও বাঁচার ঘোর?
আমি গাইবো, জন লেনন-
I told you befor, stay away from my door.

তুমি বলবে,  তুমি বলবেই এই তো কিছুটা দূর, সানরাইজের ভিউ,
আমি বলবো, রিচার্ড মার্ক্স-
Wherever you go
whatever you do
I will be right here waiting for you.

তুমি বলবে, ভাল হয়ে যাক বিশ্ব, এসো বন্ধু এসো হে,
আমরা বলবো, 
We shall overcome,  we shall overcome 
We shall overcome someday.

Comments

পাঠকের পছন্দ