অভিজিৎ পালচৌধুরী
একা তুমি একা আমি ও ভোরের আলো
একটা অন্ধকার থেকে আরেকটা অন্ধকারের দিকে হাঁটছিলাম আমরা। পরস্পরের হাত ধরে হাঁটছিলাম সবাই। যদিও আমাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, কামনা বাসনা গুলো সব আলাদা। তবু এই অন্ধকারের পৃথিবীটা কায়েম করতে আমরা পরস্পরের হাত ধরেছিলাম। কোন হাতে ছিল প্রেম, কোন হাতে প্রতারণা, কোন হাতে নৈরাশ্য, কোন হাতে রক্তের দাগ, কোন হাতে শুধুই বঞ্চনা। এতো রকম হাতের বন্ধনে গড়ে উঠেছিল আমাদের সমাজ। যে সমাজ শুধু নিতে জানে প্রকৃতির ভান্ডার থেকে, দিতে জানে না। তাই মাইলের পর মাইল বনাঞ্চল পুড়িয়ে ফেলা হয়, সমুদ্রের জল দূষিত হয়, মেরু অঞ্চলে বরফের স্তর গলতে শুরু করে। তবু আমাদের স্বার্থের সূত্রে বাঁধা হাতের বাঁধন আলগা হয় না।
এমন সময় অলক্ষে হঠাৎ উঠল এক তুমুল ঝড়।
প্রচন্ড সেই আঁধির ঝড়ে আমরা পরস্পরের হাত
ছেড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। খুনী হাত, প্রতারক হাত, প্রেমিক হাত, সব হাত একা হয়ে গেল। সেই আঁধির প্রবল তোড়ে আমরা নিক্ষিপ্ত হলাম আলাদা আলাদা গহ্বরে। এক অতল গহবর - একাকীত্বের ! কেউ কেউ সেই গহ্বরের মুখেই ছিটকে পড়ে মুখ থুবড়ে প্রাণ হারাল। যারা বেঁচে রইল অতল গহ্বরে তারা খুঁজতে লাগল নিজেদের। কে সে ? কি তার পরিচয় ? কোথায় তার অহংকার আর অপ্রতিরোধ্য আকাঙ্ক্ষা ?
সব চূরমার হয়ে পড়ে রইলো এই একাকীত্বের গহ্বরে নির্বাসনে।
একদিন হয়তো ঝড় থেমে গেলে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা মানুষের চোখের পাতা আঁধির ধুলোর নিচে একটু একটু করে কেঁপে উঠবে। আস্তে আস্তে চোখ তুলে সে দেখবে গহ্বরের মুখে ভোরের আলো তাকে ডাকছে উঠে আসার জন্যে। সে তখন নিজেকে খুঁড়ে খুঁড়ে নিজের অস্থিমজ্জা দিয়ে বানিয়ে ফেলবে মুক্তির মই। তারপর এক সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে ভোরের আলোর দিকে উঠে আসবে। দেখবে এক অনন্য পৃথিবী মা-এর মত কোল পেতে আছে চরাচর জুড়ে।
Comments
Post a Comment