স্নিগ্ধদীপ্তা মজুমদার
বন্দীদশার বৃত্তে
সমস্ত শুক্রবারের মতো সেদিনও পড়ন্ত বিকেলে কলেজস্ট্রিটের সাদা বাড়ি থেকে পা বাড়ালাম হাওড়ার দিকে। কারণ আমার বাড়ি ফেরার নাম শুক্রবার। সেদিন এখানে বৃষ্টি হয়েছে বেশ। ভিজে হাওয়ার রাতও ভোর হল। সেদিনও তেমন কথা শুনিনি । তবে করোনা যে তার প্রকোপে কাত করেছে বেশ কিছু দেশ কে সে খবর অজানা ছিল না। রোববার বিকেলে গর্ভমেন্ট নটিশ এলো আমাদের দেশেও সব স্কুল কলেজ বন্ধ থাকবে 31 শে মার্চ পর্যন্ত । তবে সে বন্দীদশার সময়সীমা বারতেই থাকল । করোনার প্রকোপও ছড়াতে জুরি মিলল না। হাহাকার , আশঙ্কা , ভয় , সঙ্কোচ মৃত্যু গ্রাস করছে গোটা পৃথিবীকে। ইতালির মতো শহরে এখনও চলেছে মৃত্যু মিছিল । ইরানেও বিপুল ক্ষতি। ভারত ও যথেষ্ট সচেতন নয় তাই আমাদের আশঙ্কা বেড়েই চলছে। তবু তারই মধ্যে ইতালির ব্যালকনিতে বেজে উঠছে স্যাক্সোফোন সঙ্গ দিচ্ছে প্রতিবেশী কিবোর্ড। ভুলতে বসা সেলাইে আবার হাত পরছে অনেকের। ধুলো ঝেড়ে হারমোনিয়ামের রিডে হাত রাখছে কেউ । কবি হবার ভূত টা মাথাচাড়া দিচ্ছে কারোর কারোর। তবু বন্দীদশা আর কদ্দিন । যাদের সঙ্গে রোজ দেখা হয় তাদের মোবাইলের স্ক্রিনে , ভিডিও কলে দেখে মন ভালো হচ্ছে তবুও বাকি থেকে যাচ্ছে অনেক কিছু। স্বপ্নের মতো ভিডিও কলে ছোঁয়া যায় না মানুষদের তাই ক্যামন যেন দূরত্ব থেকেই যায়। অনেকে অসচেতন মানুষের প্রতি রাগ অথবা ঘৃণা ছুঁড়ে দিচ্ছে ফেসবুকে। আবার এমন অনাহারে দিন কাটানো মানুষদের কথা বিন্দু মাত্র না ভেবেই চলছে রকমারি রান্নার ছবি পোস্ট। মূল্যবোধ হারাতে হারাতে আমরা মানবিকতাও হারিয়ে ফেলেছি অনেকটা। তবু খাবার ভ্যানের বিতরণের ছবিও মন ভালো করছে। পৃথিবীর এমন গভীর অসুখ যে হতে পারে তার কথা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবি নি কোনদিন। অনিশ্চিত ধূসর একলা সময়েও আমরা খুঁজে চলেছি আমাদের ভালো থাকাকে। শুনতে পাচ্ছি কেউ বলছে 'এখনও ভাবে সে ফুটবে পলাশ'। বসন্ত শেষের বিষাদী বৈশাখে কোকিল হয়তো ডেকে উঠে বলে , 'আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে/ আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে '।
Comments
Post a Comment