প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী

এমনও দিনে...



কী ভাবছি এই অবস্থায় থেকে? সরল রেখায় নেই ভাবনা এ মুহূর্তে। থাকার কথাও নয়।  
হ্যাঁ, ভাবছি আমরা গোষ্ঠী বদ্ধ ভাবে খুব খারাপ আছি। শ্রেনী নির্বিশেষে খারাপ আছি। আমাদের প্রবণতা হচ্ছে, নিজের  বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে গেলে আগে পাশের বাড়ি উঁকি দিয়ে দেখি, ওদের গেছে কিনা। গেলে আমাদের কষ্ট খানিকটা  কমে, না গেলে সাংঘাতিক বেড়ে যায়। তাই আমাদের দুঃখ, কষ্ট আপেক্ষিক। বাকিরা কতটা কষ্টে আছে দেখেই  হিসেব করি, আমাদের কতটা কষ্টে থাকা উচিত। দুঃখ, বা কষ্টের কারণের থেকেও বেশি জরুরী হয়ে পড়ে, অন্যের  খারাপ / ভাল থাকা। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেন? এভাবেও তো ভাবতে পারি, ওর চেয়ে আমি অনেক বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত বটে, কিন্তু আদৌ কি এটা আমার প্রাপ্য? কিন্তু না, ওই তুলনা মূলক ভাল থাকা দিয়েই আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিই। তবে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সেটাও পারছিনা। গোষ্ঠী বদ্ধ ভাবে সবাই খারাপ আছে। তবে হ্যাঁ, তুলনা আছে। অমুকের খাবারের যোগান আমার থেকে অনেক অনেক কম। আমি সে তুলনায় ভাল অবস্থায়। অতএব, খানিক নিশ্চিন্ত।  
 
কিন্তু না, সব সময় নিজেকে খুব একটা সান্ত্বনার আওতায় আনাও যাচ্ছেনা, কারণ সার্বিকভাবেই খারাপ আছি। কারণ খারাপ থাকার মতই পরিস্থিতি। তবে এটাও ঠিক, সব সময় ভাল থাকতেই হবে সে শর্তই বা রেখেছি কেন নিজের কাছে?  জীবনের কাছে? পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যদি খারাপ থাকি তাহলে সেই খারাপ থাকার সঙ্গে সহাবস্থান করার মত ব্যবস্থাপনা নিজেই কেন করে নিইনা, কেন অনভিপ্রেতের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উঠে দাঁড়াতে পারিনা। পরিস্থিতি মানলাম বাহ্যিক ব্যাপার, আমাদের হাতের বাইরের কিন্তু এই ব্যবস্থাপনা তো আভ্যন্তরীণ ।  আসলে এটা দীর্ঘকালের অনভ্যাস।  আমরা ছোট থেকে আদরে আহ্লাদে নিজেদের প্রাপ্তি –তন্ত্র কে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাই যে অপ্রাপ্তি কিংবা প্রত্যাখ্যান এর সামনে হাত জোড় করে বসে থাকা ছাড়া আর কোনও রাস্তা আমাদের থাকেনা। অপ্রাপ্তি কিংবা প্রত্যাখ্যানের চোখে চোখ রেখে বলতে পারিনা, আমি ভয় পাই না।
তসলিমা নাসরিনের সম্ভবত ‘আমার মেয়েবেলা’ তে ওর মা কে নিয়ে লেখা একটা অধ্যায় ছিল। অন্যতম প্রিয় অধ্যায় সেটা আমার। সেখানে পড়া একটা লাইন আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তি তে এখনও টিকে আছে। একটু না বললে বোঝা যাবেনা। ব্যাপারটা এরকম, ওর মা একজন গৃহবধূ এবং অন্যের পাওয়া সম্পর্কে যতটা যত্নশীল নিজের চাওয়া সম্পর্কে ততটাই উদাসীন। এক জায়গায় নিজের মায়ের কথা বলতে গিয়ে লেখিকা বলছেন, মায়ের অভাব আছে, অভাবের বোধ নেই। আমি মৌলিক প্রয়োজনের কথা বলছি না। তার বাইরে আমাদের মত মানুষেরা এখন যেসব অভাব অসুবিধের কথা বলে হাহাকার করছেন, আমি শুধুমাত্র সে জায়গায় এই অভাব বোধ নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করতে অনুরোধ করছি।  অপ্রাপ্তি আর প্রত্যাখ্যানের সামনে একটু দৃঢ় ভাবে দাঁড়াতে অনুরোধ করছি।

Comments

পাঠকের পছন্দ