দীপশিখা চক্রবর্তী

গুচ্ছ কবিতা


শোক

জানালার শিক গলে ভেসে আসছে শোক,

অসুখ হয়েছে পৃথিবীর! 

স্তব্ধ শহরের ঝলসানো বুকে সতর্কতার ব্যানার,

এখন শুধু আলো মাখে ঘর;

রোজ একটু একটু করে মুছে দিচ্ছি চার দেওয়ালের নৈঃশব্দ্য আর ক্লান্তি,

ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাতের গন্ধেই বিছিয়ে যাচ্ছে আকাশিয়া সুখের বিছানা,

তবুও মাঝে মাঝে পাথর হয়ে উঠি,
ভয় লিখে রাখি খাতায়!

হঠাৎ এই সুখ-বিষাদের রাজত্বে হারিয়ে যাচ্ছে সব কবিতা,

জীবন তো নয়, মৃত্যুই সবসময় কঠিন করে গুছিয়ে রেখেছে বরাবর;

যতবার বাইরের নিস্তব্ধতা এক যুদ্ধ এঁকে দেয়,
ততবার ভাঙি, কিন্তু হারছি না!

শুধু আলোর নেশা কাটলে ক্লান্ত লাগছে ভীষণ, 
ভাবছি-
এই জীবনে কি সবকিছুর দাম দিতে পেরেছি!




ভয়

পৃথিবী জুড়ে লাশের যুদ্ধ,

প্রত্যকটা শরীর থেকে বেরিয়ে আসছে নিঃশব্দ গর্জন,

যারা আবদ্ধ, তারা চার দেওয়ালের মধ্যেই নিজেদের অপরাধ চেটে খাচ্ছি;

কোথাও উনুনের ওপর পড়ে আছে শুকনো ভাতের হাঁড়ি , 
অভাবটুকুও স্মৃতি!

প্রকৃতি আজ সুখেই,

শিরদাঁড়া ভাঙা মানুষদের জন্য সে আর খুলে রাখেনি আঁচল,
ভেদাভেদ ভুলে চোখ বেঁধে নেমে পড়েছে নিজের শুদ্ধিকরণে,

নতুন এক সংজ্ঞা-
বেঁচে থাকার,

যন্ত্রণার পরে উঠে দাঁড়ালে আমরা আবার নির্লজ্জ হয়ে উঠবো না তো!



হারানো সময়

এখন যদি ভালোবাসায় হারাই,
গুমোট শহর, অন্ধকারের ভীড়ে;
আবেগের বাতাস দেবেই ধরা,
কলম যখন লিখবে পাঁজর চিড়ে।

হারবো না, বিষ মিছিলের ছোঁয়ায়, 
সময়ের বুকে জমছে পলিমাটি ;
আচমকা সব যুদ্ধ যাবে থেমে,
ক্লান্ত শরীর আলোর মতো খাঁটি।

বিলাস ঘরেই বসন্ত রঙ নামে,
অচিন সুতোয় হাত-পা এখন বাঁধা;
ঘরের আকাশ কাব্য-ভেজা মেঘ,
জীবন বোনে জটিল বড় ধাঁধা। 


অসুখী শহর

জানি না কবে চলবো তোমার সাথে,
চৈত্র মাস, অসুখে শহর পোড়া;
স্বেচ্ছায় আজ চার দেওয়ালের বাস,
জটিল সময় নির্জনতায় মোড়া।

দেখো ঠিক বৃষ্টি হবে খুব,
সন্ধ্যার পথে ভাসবে গোপন কথা;
এক ফোঁটা লাল বিষাদ আঁকে এখন,
জমছে সুখের দগ্ধ দৃঢ় গাঁথা।

আমার ঘরে সবই এলোমেলো, 
জানালার কাচে রঙচটা এক ছবি;
চাঁদের আলো তবুও নির্ভেজাল,
বদ্ধ ঘরে জীবন লেখে কবি!

আর ক'টা দিন, থাক না অপেক্ষা,
বিপদ ছুঁয়ে গুছিয়ে রাখি আশা;
কুয়াশা মুছে আসবে আলোর ভোর,
থাকবে ভালো সবার ভালোবাসা।

Comments

পাঠকের পছন্দ