রানা দাস

ভারসাম্য 



বাতাসের মধ্যে আজকে আর কোনো ধূলিকণার অবশিষ্ট নেই। কিছুদিন আগেও রাস্তার ওপর ইতস্তত পরে থাকা লাশগুলো থেকে যে দুর্গন্ধ বের হতো - সেটাও মিলিয়ে গেছে রাস্তার ওপরেই গজিয়ে ওঠা বনফুলের চড়া গন্ধে।জমে থাকা আবর্জনার স্তুপের পেছনে এখনো চোখে পরে কিছু নারকঙ্কালের অবশিষ্ট।  মানুষ কথা শোনেনি। যাদেরকে শাষণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তারা শোষিত হবে ভেবে পথে নেমে পড়েছিল। আর যারা শাষণ করবে মনে করেছিল নিয়তির পরিহাসে তাদেরকেও একসময় নীচে নেমে এসে শোষিতদের সাথে মিশে যেতে হয়েছিল।

বিজ্ঞান একটা সময় পর্যন্ত লড়বার চেষ্টা করেছিল। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। বিজ্ঞান এই পরিস্থিতিটার সঙ্গে যুদ্ধে নামবার আগে যখন তার অস্ত্রে শান দিচ্ছিলো তখন একটা বিশাল মহাযুদ্ধ তার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিলো। সেটা ছিল বিশ্বাসের যুদ্ধ। আসলে বিজ্ঞান নিজে কোনো  মানবদেহী পুরুষ বা নারী ছিল না। বিজ্ঞান ছিল একটা বিশ্বাস। যে যুদ্ধের জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত করছিলো যুদ্ধে নেমে সে উপলব্ধি করেছিল যে যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেছে তার নিজের সঙ্গে।  আর সেই বদলের সাথে তাল মেলানোর তাগিদে বিশ্বাসে ভর দেওয়া মানুষগুলোও শেষে ছুটে এসেছিলো নিরাপদ গোষ্ঠীর খোঁজে। কিন্তু মানুষ যত মরতে শুরু করলো, গোষ্ঠী গুলো তাতো আকার আয়তনে ছোট হতে শুরু করলো।  ছোট হতে হতে হতে এক সময় দেখলো একদম এক হয়ে ক্ষুদা আর মৃত্যুর সঙ্গে একশয্যায় শায়িত সে। তখন নতুন  কিছু করার আর অবশিষ্ট ছিল না।   ধু ধু রাস্তা, দানবের মতো দাঁড়িয়ে থাকা অট্টালিকা আর ঝাঁ চকচকে শপিং মলগুলোর সাথে মাটির সঙ্গে প্রায় মিশে যাওয়া একতালা আর বস্তি বাড়িগুলোর আজ আর কোনো পার্থক্য ছিল না। কারণ পার্থক্য যারা করেছিল আজ তারাই ছিল না।

সেই সময়টার কথা লিখছি যখন সময় ছিল কিন্তু সময়ের হিসাব মিলিয়ে নেবার মতো কেউ আর ছিল না।  বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি সবকিছুর মেলবন্ধনে তৈরী হওয়া সেই এক অদ্ভুত মূল্যহীন রাত্রির শেষে সকাল হলো সকালের মতো করেই। সূর্যের প্রথম আলো গিয়ে পড়লো বিশাল কালো এক দরজার ওপর।  ঝনাৎ করে বিকট এক শব্দে খুলে গেলো তার বিশাল বড়ো  দরজা। তারপর ভিতর থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো মানসিক ভারসাম্যহীন কিছু মানুষের ছোট্ট একটা দল। সাম্যের লড়াইয়ে ব্যাস্ত থাকা পৃথিবীতে যাদেরকে বন্দী করে ভুলেই গিয়েছিলো জীবিতদের দল।

Comments

পাঠকের পছন্দ